স্টাফ রিপোর্টার :
ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকায় জলাবদ্ধতার চিত্র অন্তত দেড় যুগের পুরনো। এই দীর্ঘ সময়েও স্থায়ী সমাধান মিলেনি লালপুরবাসীর ভাগ্যে। স্থানীয়দের অভিযোগ, লালপুরের জলাবদ্ধতা এখন জনপ্রতিনিধিদের স্ট্যান্টবাজিতে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় তলিয়ে থাকা এই জনপদ নিয়ে কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি আশ^াসের বাণী দিয়ে দায়িত্বশীলতা জাহির করেছেন, আবার কেউ পানিতে পা ভিজিয়ে মানবিকতা ও জনদরদী মনোভাব প্রচারের আড়ালে সমালোচনা ঢাকার কৌশলও করেছেন। অনেকে আবার ভোটের আগে এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের আশ^াস দিয়ে ওই এলাকা ভোট বাগিয়ে নিয়েছেন। তবে আশ^াসের বাণী যেন বাণীতেই সিমাবদ্ধ রয়েছে।
বছর ঘুরে আবারও বৃষ্টির মৌসুম চলে আসায় লালপুর এবং তৎসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের মানুষের কপালে আবারও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এবারও সেই দুঃসহ ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে এমপি হন সারাহ বেগম কবরী। এরপর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন থেকে নিয়ে অদ্যবধি টানা ১০ বছর ধরে এই এলাকার এমপি সাংসদ শামীম ওসমান। শ্লোগাণে বলা হয়, ফতুল্লার মাটি শামীম ওসমানের ঘাঁটি। কিন্তু সেই শামীম ওসমানের নির্বাচনি অঞ্চলের ঘণবসতিপূর্ন এলাকা লালপুর বছরের বেশির ভাগ সময়ই থাকছে পানির নিচে। ডিএনডির জলাবদ্ধতা দূর করণে শামীম ওসমান মেগা প্রজেক্ট এনে দিয়েছেন বলে প্রচার করা হলেও লালপুরের এই অঞ্চলটি প্রকল্পের আওতায় না আসায় যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনই রয়েছে আক্ষেপও।
স্থানীয়রা বলছেন, লালপুরের এই পানির নেপথ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সাথে ইগোর রাজনীতি রয়েছে। এই রাজনীতিতে যেমন রয়েছে অহমিকা, তেমনই রয়েছে বাণিজ্যও। ভোগান্তিকে কেন্দ্র করে এমন রাজনীতি ও বাণিজ্যের ডালপালা বুনেছেন স্বার্থান্বেষী মহল। এদের কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি, আবার কেউ কেউ নিজেদের আওয়ামী লীগার হিসেবে জাহির করে থাকেন। আর এই রাজনীতিতে সুক্ষ্ম ভাবে জড়িয়ে আছে স্থানীয় বিএনপি নেতারাও। সরেজমিনে গিয়ে এমন রাজনীতি ও বাণিজ্যের কথাই শোনা গেছে ভুক্তভুগিদের মুখে।
লালপুরের আদি বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে অধিকাংশ জায়গার মালিক বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ-আলম। নানা কারণেই স্থানীদের কাছে তিনি দানবীর হিসেবে ভূষিত হয়েছিলেন। শাহ-আলম চাইলেই তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে এই জলাবদ্ধতার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তিনি লালপুর ইস্যুতে নিরব রয়েছেন। আবার এগিয়ে আসতে চাইলেও রাজনীতিতে তার প্রতিপক্ষ বনে যাওয়া পক্ষটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকেন বলেও স্থানীয়দের মাঝে আলোচনা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি নেতা শাহ-আলমের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ‘২০০৮ সালে শাহআলম বিগত সময়ে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পদে নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, কবরীর পরিবর্তে শাহ-আলম জয়ী হলে তিনি ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে হলেও লালপুরের জলাবদ্ধতা দুরকরণে এগিয়ে আসতেন। চাইলে এখনো সেটা করতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না এই কারণেই যে, তিনি সেখানকার জনপ্রতিনিধি নন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় প্রবীন এক ব্যক্তি বলেন, ‘শামীম ওসমানও চাইলে ওই এলাকার জলাবদ্ধতা দূরকরণে অবদান রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না। কারণ তিনি জানেন, লালপুর এলাকাটি বিএনপি বা শাহ আলমের ঘাঁটি। তা জেনে বুঝেই কী লালপুরের জলাবদ্ধতার সমস্যা স্থায়ী ভাবে দূর করণে উদাসীন রয়েছেন শামীম ওসমান- এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে স্থানীয়দের মাঝে। যদিও বছর দুই আগে তিনি লালপুর এলাকার নোংড়া পানিবন্দি সড়কে নেতাকর্মীদের নিয়ে পায়ে হেটে পরিদর্শণ করেছিলেন। নানা আশ^াস দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সেই আগের মতই ভঙ্গুর হয়ে আছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, লালপুরের জলাবদ্ধতা এখন অভ্যন্তরীন রাজনীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি পক্ষ পানি নিয়ে রাজনীতি করছে, আরেকটি পক্ষ আবার পানি দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থকড়ি তুলছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জলাবদ্ধতামুক্ত লালপুর চান কিনা- তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।